সৌদি আরবে কর্মীর ফাইনাল এক্সিট বা খুরুজ নিহায়া হলে কোম্পানি থেকে কর্মী কি কি সুবিধা বা অধিকার পাবেন আলোচনা করা হলো। যারা ছোট মোয়াছাছাতে বা কোম্পানিতে কাজ করেন তারা অনেকেই জানেন না ফাইনাল এক্সিট নিয়ে দেশে গেলে কি কি সুবিধা পাবেন। ফলে প্রবাসী কর্মী নানাবিধ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
ফাইনাল এক্সিট বা আরবিতে খুরুজ নিহায়া কি
এক কথায় বলতে গেলে যখন কোন কর্মীকে তার কোম্পানি বা কফিল ছুটিতে না পাঠিয়ে একবারে দেশে পাঠিয়ে দেন তাকে ফাইনাল এক্সিট বা খুরুজ নিহায়া বলে। সাধারণত কোন কর্মীর সাথে ১ বছর বা ২ বছরের কাজের কন্ট্রাক্ট বা চুক্তি থাকে। কর্মী যদি চায় চুক্তির মেয়াদ শেষে দেশে চলে যাবে তাহলে কোম্পানি তার সিস্টেম থেকে কর্মীকে ফাইনাল এক্সিট ভিসা বা খুরুজ নিহায়া দিয়ে দেয়।আবার কর্মী যদি কাজ করতে গিয়ে কফিলের কোন নিয়ম ভঙ্গ করে, কফিল যদি কর্মীর উপর অসন্তুষ্ট হয়ে থাকে, তাহলে চুক্তি শেষ হবার আগেই কফিল কর্মীকে ফাইনাল এক্সিট ভিসা দিতে পারে। ফাইনাল এক্সিট ভিসা দিলে কর্মী কোনভাবেই সৌদি আরবে অবস্থান করতে পারবেনা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশে চলে যেতে বাধ্য। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশে না গেলে কর্মী অবৈধ হয়ে যাবেন। পরবর্তীতে নানা ধরনের আইনি জটিলতা ভোগ করতে হবে।
কেন কফিল বা কোম্পানি কর্মীকে ফাইনাল এক্সিট দেয়?
সৌদি আরবে অবস্থানরত প্রবাসীরা ফাইনাল এক্সিট বা খুরুজ নিহায়া পায় ৩ কারনে। যথা:
১. কাজের চুক্তি শেষ হলে।
২. কর্মীর উপর কফিল অসন্তুষ্ট হলে।
৩. কর্মী কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করলে।
কাজের চুক্তি শেষ হলে কফিল যদি মনে করে এই কর্মীকে আর প্রয়োজন নেই তাহলে কফিল ২ টি কাজ করতে পারে।
ক. ফাইনাল এক্সিট দিতে পারে।
খ. অন্য কোম্পানিতে কাফালা হওয়ার অনুমতি দেওয়া।
তাছাড়া কর্মী যদি কাজের চুক্তি শেষ হলে কফিলকে বলে থাকেন তিনি আর এই কোম্পানিতে কাজ করতে অনিচ্ছুক। তাহলে কফিল ঐ শ্রমিক বা কর্মীকে ফাইনাল এক্সিট দিবেন।
ফাইনাল এক্সিট বা খুরুজ নিহায়া তোলা যায় কিনা?
ফাইনাল এক্সিট বা খুরুজ নিহায়া দেওয়া সম্পূর্ণ কফিল বা কোম্পানির এখতিয়ার। কফিল ছাড়া অন্য কেউ ফাইনাল এক্সিট বা খুরুজ নিহায়া উঠিয়ে নিতে পারবেনা। যদি কফিল ফাইনাল এক্সিট দিয়ে দেয় আর আপনি আরো কিছু বছর সৌদি আরবে থাকতে চান তাহলে আপনাকে কফিলের সাথে বসে মিমাংসা করতে হবে। ফাইনাল এক্সিট তুলতে হয়তো ৬০০ রিয়াল দাবি করতে পারে।কারন ফাইনাল এক্সিট দিতে কফিলের ৬০০ রিয়াল খরচ হয়।
বলে রাখা ভালো কফিল ব্যতিত অন্য কোন মক্তব বা দালাল আপনার ফাইনাল এক্সিট তুলতে পারবেনা।
কফিল ফাইনাল এক্সিট দিলে অন্য কোম্পানিতে কাফালা হওয়া যায় কিনা?
উত্তর হচ্ছে না। সৌদি আরবে কোন কফিল কোন কর্মীকে ফাইনাল এক্সিট দিয়ে দিলে ঐ কর্মী অন্য কোম্পানিতে কাফালা হতে পারবেনা। তবে কফিলের সাথে মিমাংসা করে কফিল ফাইনাল এক্সিট তুলে নিলে তবেই ঐ কর্মী অন্য কোম্পানিতে কাফালা হতে পারবে। এক্ষেত্রে কর্মীর টাকা পয়শা খরচ হবে যদি কফিল দাবি করে।
ফাইনাল এক্সিট পেলে কি করবো?
ফাইনাল এক্সিট পেলে সর্বপ্রথম কোম্পানির সাথে মিমাংসা করার চেষ্টা করতে হবে। প্রত্যেকটা কোম্পানিতে কফিল বা কোম্পানির একজন প্রিয় কর্মী থাকে হতে পারে সে ম্যানেজার বা সুপারভাইজার। প্রয়োজনে ম্যানেজার বা সুপারভাইজারকে দিয়ে সুপারিশ করাতে পারেন। টাকা পয়শা কিছু খরচ করতে হবে। মনে রাখা বিশেষ প্রয়োজন কফিল ছাড়া অন্য কেউ ফাইনাল এক্সিট তুলতে পারবেনা। আর যদি কোনভাবেই কফিলকে রাজি করানো না যায় তাহলে দেশে চলে আসাই উত্তম। দেশে চলে আসলে অন্য কোম্পানিতে ১ মাসের মধ্যে আবার সৌদি আরবে যেতে পারবেন। আর যদি ফাইনাল এক্সিট পাওয়ার পর দেশে না গিয়ে অবৈধ হয়ে থাকেন তাহলে পুলিশে ধরা দিয়ে বা জেল খেটে বা এম্বাসির দ্বারস্থ হয়ে দেশে যেতে পারবেন কিন্তু সৌদি আরবে আর ফিরে আসতে পারবেন না।
ফাইনাল এক্সিটের পর কর্মীর প্রাপ্য সুবিধাসমূহ
সৌদি আরবে কাজ শেষ করে যখন কোনো কর্মী ফাইনাল এক্সিট ভিসা বা খুরুজ নিহায়া নিয়ে দেশে ফেরার প্রস্তুতি নেন, তখন কোম্পানি থেকে কিছু নির্দিষ্ট সুবিধা বা অর্থনৈতিক অধিকার পাওয়ার সুযোগ থাকে। সৌদি আরবের শ্রম আইন অনুযায়ী কর্মী এবং কোম্পানি উভয়েরই কিছু দায়িত্ব এবং অধিকার রয়েছে। কর্মীদের কী কী সুবিধা বা প্রাপ্য রয়েছে এবং সেগুলো কিভাবে পাওয়া যায়, এই নিবন্ধে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. এন্ড অফ সার্ভিস বেনিফিট বা অবসর ভাতা বা কন্টাক্ট শেষে হিসাব।
সৌদি আরবের শ্রম আইন অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট সময় কাজ করার পর কর্মীরা “এন্ড অফ সার্ভিস বেনিফিট” (End of Service Benefit) পাওয়ার অধিকার রাখেন। এন্ড অফ সার্ভিস বেনিফিট কর্মীদের নিকট হিসাব নামে পরিচিত। তাদের কাজের মেয়াদ, চাকরির ধরন এবং বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।
সাধারণত, প্রথম ৫ বছরের জন্য প্রতিটি বছরের অর্ধেক মাসের বেতন এবং পরবর্তী বছরগুলোতে প্রতিটি বছরের পুরো মাসের বেতন হিসেবে এই ভাতা প্রদান করা হয়। এছাড়া qiwa তে একাউন্ট খুলে আপনি চাকুরির মেয়াদ শেষে কত রিয়াল পাবেন সেখানে জানতে পারবেন।

এখানে limited period এ ক্লিক করবেন। End of contract reason পার্টে Choose a reason এ ক্লিক করলে অনেক অফশান আসবে। Termination of the contract upon its expiration ক্লিক করবেন।
অফশানে আপনার বেতন লিখবেন। তবে মনে রাখা প্রয়োজন Qiwa কন্ট্রাক্টে আপনার বেতন যা আছে তাই লিখবেন। হয়তো আপনার বেসিক বেতন qiwa তে লেখা আছে ১২০০ রিয়াল আর কফিল আপনাকে ২০০০ রিয়াল বেতন দেয়। এক্ষেত্রে আপনি সেলারি ১২০০ রিয়াল লিখবেন।
Contract start date এ ক্লিক করলে ক্যালেন্ডার দেখতে পারবেন। সেখান থেকে আপনি যেদিন কোম্পানিতে কাফালা হয়েছেন সেদিনের তারিখ বসাবেন। আপনার কাফালার দিন তারিখ যদি ভুলে যান তাহলে আপনি qiwa থেকে জেনে নিতে পারবেন।
Contract end date এ ক্লিক করলে ক্যালেন্ডার দেখতে পারবেন। সেখান থেকে আপনার কন্টাক্ট যেদিন শেষ হবে সেদিন লিখবেন।
তারপর Calculate end of service reward এ ক্লিক করলে আপনি মেয়াদ শেষে কত রিয়াল পাবেন তা দেখতে পাবেন।

২. মোট বেতন এবং বোনাস (চূড়ান্ত মাসিক বেতন)
কর্মী ফাইনাল এক্সিটের সময় শেষ মাসের যতদিন কাজ করবেন ততদিনের বেতন পাওয়ার অধিকার রাখেন। যদি কর্মী অতিরিক্ত কাজ করে থাকেন এবং ওভারটাইম প্রাপ্য থাকে, তবে সেগুলোর জন্যও অর্থ প্রদান করা হবে।
যদি কোনো বিশেষ বোনাস বা অগ্রিম বেতন কর্মী প্রাপ্য থাকেন, তবে সেটাও চূড়ান্ত হিসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
3. ছুটির প্রাপ্যতা এবং লিভ এনক্যাশমেন্ট
কর্মী যদি কাজের সময় কোনও অব্যবহৃত ছুটি রেখে দেন, তবে সেই ছুটির টাকা তাকে “লিভ এনক্যাশমেন্ট” হিসেবে দেওয়া হবে। এটি সাধারণত মাসিক বেতনের ভিত্তিতে হিসাব করা হয়।
প্রাপ্য ছুটি ও অগ্রিম ছুটির দিনগুলো অনুযায়ী ছুটির হিসাব করা হয় এবং ফাইনাল এক্সিটের আগে এটি প্রদান করা হয়।
4. ফ্লাইটের টিকিট বা যাতায়াত খরচ
সৌদি শ্রম আইন অনুযায়ী, কোম্পানি কর্মীকে ফাইনাল এক্সিট ভিসা ইস্যুর পর দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য ফ্লাইটের টিকিট বা যাতায়াত খরচ বহন করবে।
কিছু ক্ষেত্রে কর্মী এবং নিয়োগকর্তার চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ফ্লাইট খরচের পরিমাণ নির্ধারিত হয়। সাধারণত এটি ইকোনমি ক্লাসের টিকিট হিসেবে দেওয়া হয়।
5. গ্র্যাচুইটি (অতিরিক্ত ভাতা)
কিছু কোম্পানি তাদের কর্মীদের জন্য গ্র্যাচুইটি বা অতিরিক্ত ভাতা দিয়ে থাকে। এটি নির্ভর করে কোম্পানির নীতিমালা এবং কর্মীর কাজের ধরণ ও কাজের অভিজ্ঞতার উপর।
6. মেডিকেল ইনস্যুরেন্স এবং স্বাস্থ্য সুবিধা
সৌদি আরবের বেশিরভাগ কোম্পানি কর্মীদের জন্য মেডিকেল ইনস্যুরেন্স প্রদান করে। ফাইনাল এক্সিটের সময়ও কর্মীকে মেডিকেল সুবিধা দেওয়ার বিধান থাকতে পারে, বিশেষ করে যদি কর্মী শেষ সময়ে চিকিৎসাধীন থাকেন।
অনেক কোম্পানি কর্মীদের শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে থাকে, যাতে কর্মী এবং তার পরিবার দেশে ফেরার আগেই চিকিৎসা ব্যবস্থা পান।
7. অন্য কোনো আর্থিক পাওনা বা প্রতিশ্রুতি
যদি কোম্পানি কর্মীকে কোনো প্রকার অগ্রিম বেতন, ইনসেনটিভ বা বোনাসের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে, তবে ফাইনাল এক্সিটের আগে সেই অর্থ প্রদানের বাধ্যবাধকতা থাকে।
যেমন, পারফরমেন্স বোনাস, প্রজেক্ট বোনাস ইত্যাদি ফাইনাল এক্সিটের সময় প্রদান করতে হবে।
৮.পুনরায় সৌদি আরবে আসার সুযোগ
ফাইনাল এক্সিট ভিসা নিয়ে দেশে গেলে আপনি আবার চাইলেই ১ মাসের মধ্যে পুনরায় সৌদি আরবে অন্য কোম্পানিতে আসতে পারবেন।
ফাইনাল এক্সিটের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া এবং হিসাব
কর্মীর ফাইনাল এক্সিটের জন্য কোম্পানি একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। এই প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত পাওনার হিসাব, বোনাস এবং ইনসেনটিভ সহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে।
প্রক্রিয়ার ধাপসমূহ:
1. অ্যাকাউন্ট সাইন-অফ: কর্মীর প্রাপ্য সমস্ত আর্থিক হিসাব সম্পন্ন করা হয়।
2. হিসাব যাচাই: কোম্পানির ফাইন্যান্স বিভাগ এই হিসাবগুলো যাচাই-বাছাই করে, যাতে কর্মী সঠিকভাবে তার পাওনা পান।
3. চূড়ান্ত অর্থপ্রদান: সব যাচাই শেষে কর্মীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বা ক্যাশ আকারে তার প্রাপ্য প্রদান করা হয়।
ফাইনাল এক্সিটের সময় গুরুত্বপূর্ণ টিপস
নথিপত্র যাচাই করুন: সব নথি, চুক্তি এবং চূড়ান্ত হিসাব ঠিকঠাক যাচাই করে নিশ্চিত হয়ে নিন।
ইকামার মেয়াদ চেক করুন: ফাইনাল এক্সিট নেওয়ার আগে ইকামার মেয়াদ এবং বৈধতা নিশ্চিত করুন।
কোম্পানির সাথে যোগাযোগ রাখুন: ফাইনাল এক্সিট এবং সমস্ত আর্থিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে কোম্পানির হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের সাথে যোগাযোগ রাখুন।
ফাইনাল এক্সিট ভিসা পাওয়ার শর্ত
ফাইনাল এক্সিট কফিল বা কোম্পানি তার সিস্টেম থেকে প্রদান করে। কর্মী ফাইনাল এক্সিটের জন্য কফিল বা কোম্পানির কাছে মৌখিকভাবে বলতে পারেন। বাকি প্রক্রিয়া কফিল বা কোম্পানি সম্পন্ন করে থাকে।
উপসংহার
সৌদি আরবে কর্মীর ফাইনাল এক্সিট হলে কিছু নির্দিষ্ট আর্থিক সুবিধা ও অধিকার রয়েছে যা কর্মী পাওয়ার যোগ্য। সৌদি আরবের শ্রম আইন অনুযায়ী কোম্পানি এই সকল সুযোগ সুবিধা দিতে বাধ্য থাকবে। কোম্পানি বা কফিল দিতে অস্বীকার করলে কর্মী মক্তব আল আমেলে গিয়ে অভিযোগ করলে কফিল এই সুযোগ সুবিধা দিতে বাধ্য থাকবে।