প্রবাসীরা ছুটিতে আসার পর অতি দ্রুত নতুন ভিসায় সৌদি আরবে যাওয়ার প্রক্রিয়া

নতুন ভিসায় সৌদি আরবে যাওয়ার প্রক্রিয়া আলোচনা করা হলো। সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশীরা ছুটিতে দেশে এসে কিভাবে নতুন ভিসায় সৌদি আরবে যাবেন তার প্রক্রিয়া আলোচনা করা হল। অনেক বাংলাদেশি সৌদি আরব থেকে ছুটিতে দেশে আসেন এবং  কিছু সময় পর আবারো নতুন ভিসায় সৌদি আরব ফিরে যেতে আগ্রহী হন। তবে, সৌদি আরবে কাজের জন্য পুনরায় যেতে হলে কিছু নিয়ম-কানুন এবং ভিসা সম্পর্কিত বিষয় জেনে রাখা জরুরি।

নতুন ভিসায় সৌদি আরবে যাওয়ার প্রক্রিয়া

Table of Contents

১. সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য নতুন ভিসা পাওয়ার নিয়ম।

সৌদি আরবে কাজের জন্য নতুন ভিসা পেতে হলে প্রথমে আপনার আগের ভিসা সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা প্রয়োজন। এজন্য, আপনার নিয়োগকর্তা বা কফিলের অনুমতি থাকতে হবে। আগের ভিসা বাতিল করা যায় ২ ভাবে।যথা ১. ফাইনাল এক্সিট ভিসার মাধ্যমে আগের বা পুরাতন ভিসা বাতিল করা যায়। ২. ছুটিতে এসে যথাসময়ে সৌদি আরবে ফিরে না গেলে আগের ভিসা বাতিল হয়ে যায়।

ফাইনাল এক্সিট ভিসা বা খুরুজ নিহায়ার মাধ্যমে দেশে এসে নতুন ভিসায় সৌদি আরবে যাওয়ার প্রক্রিয়া।

আপনার পূর্বের নিয়োগকর্তার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে ফাইনাল এক্সিট ভিসা  বা খুরুজ নেহায়ি নেওয়া বাধ্যতামূলক। আপনি যদি ফাইনাল এক্সিট নিয়ে দেশে আসেন তাহলে নতুন ভিসা নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে পুনরায় সৌদি আরবে যেতে পারবেন।

রি-এন্ট্রি ভিসা বা খুরুজ আওদা বা ছুটিতে এসে নতুন ভিসায় সৌদি আরবে যাওয়ার প্রক্রিয়া।

আপনি যদি সৌদি আরব থেকে ছুটিতে দেশে আসেন এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন আপনি  বর্তমান কোম্পানিতে ফিরে যাবেন না তাহলে অন্য নিয়ম। আপনি সৌদি আরবে নতুন কোম্পানিতে যেতে হলে নতুন ভিসার মাধ্যমে যেতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার ছুটির মেয়াদ শেষ হতে হবে,  ইকামার মেয়াদ শেষ হতে হবে। এই প্রক্রিয়াগুলো শেষ হতে কমপক্ষে ৬ মাস সময় লাগে। অর্থাৎ সৌদি আরবে অবস্থানরত প্রবাসী কোন কর্মী ছুটিতে নিজ দেশে গিয়ে অন্য কোম্পানিতে ফিরে আসতে চাইলে কমপক্ষে ৬ মাস পরে আসতে পারবেন।

ফাইনাল এক্সিট পাওয়ার জন্য সকল জরিমানা পরিশোধ।

ফাইনাল এক্সিট ভিসা পেতে কর্মীর ইকামাতে কোনো জরিমানা বা ফি বাকি থাকে, তবে সেটি পরিশোধ করে দিতে হবে। অর্থের মামলা, ট্রাফিক মামলা, সিম কোম্পানির মামলা নিষ্পত্তি করে ফাইনাল এক্সিট ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। জরিমানা পরিশোধ করলে ফাইনাল এক্সিট ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে।

আপনার ইকামাতে কোন জরিমানা আছে কিনা তা যাচাই করতে আবশিরে লগইন করে চেক করে নিন

 

২. নতুন স্পন্সর খুঁজে পাওয়া

নতুন ভিসায় সৌদি আরবে কাজের জন্য আপনাকে একটি নতুন স্পন্সর বা নিয়োগকর্তা  বা কফিল খুঁজে পেতে হবে। স্পন্সরই আপনার জন্য কাজের ভিসা এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।

অনলাইন প্ল্যাটফর্মে জব খোঁজা: বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমন LinkedIn, Bayt, MonsterGulf এবং Gulftalent এর মাধ্যমে নতুন নিয়োগকর্তা খোঁজা যেতে পারে।

রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে: বাংলাদেশে অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব। এজেন্সিগুলো সৌদি আরবে বিভিন্ন কাজের জন্য ভিসা পেতে সাহায্য করে থাকে

নতুন ভিসা প্রক্রিয়া ও আবেদন

নতুন ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করতে হয়। নিচে সেই ধাপগুলো উল্লেখ করা হলো:

প্রতিটি নতুন ভিসার জন্য নতুন নাগরিক সনদপত্র বা চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য আপনাকে নাগরিক সনদপত্র সংগ্রহ করতে হবে। নাগরিক সনদপত্র আপনি আপনার এলাকার ইউনিয়ন অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র না জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি লাগবে।

প্রতিটি নতুন ভিসার জন্য নতুন করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স।

ভিসা প্রসেসিং করতে অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি ডকুমেন্ট হলো পুলিশ ক্লিয়ারেন্স।  আপনার নিকটস্থ থানা আপনাকে একটি পেপার দিবে যেখানে লেখা থাকবে আপনার নামে কোন মামলা নেই। আপনি অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আপনি নিজে আবেদন করতে না পারলে যেকোন কম্পিউটার দোকানে গিয়ে আবেদন করতে পারবেন।পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হচ্ছে চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট বা নাগরিক সনদপত্র, প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি, পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ১ কপি ছবি। আবেদন ফি ৫০০ টাকা।

নিয়োগপত্র বা অফার লেটার প্রাপ্তি: নতুন স্পন্সর আপনাকে একটি নিয়োগপত্র প্রদান করবেন যা আপনাকে কাজের ভিসার আবেদন করার জন্য প্রয়োজন।

ভিসা প্রক্রিয়া: নিয়োগকর্তা সৌদি আরবের মন্ত্রণালয়ে আপনার ভিসা প্রক্রিয়া শুরু করবেন এবং একটি ভিসা অনুমোদন সংখ্যা বা ইস্তেকামা নম্বর প্রদান করবেন।

সৌদি দূতাবাসে আবেদন: ভিসা অনুমোদন নম্বর প্রাপ্তির পর এটি বাংলাদেশে সৌদি দূতাবাসে জমা দিতে হবে। দূতাবাসে নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে আপনার জন্য নতুন ভিসা ইস্যু করবে।

৪. প্রতিটি নতুন ভিসার জন্য নতুন করে মেডিকেল চেক আপ বা মেডিকেল টেস্ট

সৌদি আরবে কাজের ভিসা প্রসেসিং করতে  স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা মেডিকেল চেক আপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই পরীক্ষাটি সৌদি সরকারের নির্ধারিত হাসপাতাল বা ক্লিনিকে সম্পন্ন করতে হবে। মেডিকেল চেক আপ করার জন্য এজেন্সির মাধ্যমে বা নিজেই মেডিকেল স্লিপ বের করতে হয়।

স্বাস্থ্য সনদ: স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর একটি সনদ প্রদান করা হবে যা ভিসা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দরকার হবে।

পাসপোর্টে স্বাস্থ্য সনদ লাগানো: স্বাস্থ্য সনদটি বাংলাদেশে সৌদি দূতাবাসে আপনার পাসপোর্টের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। এটি আপনার ভিসা প্রক্রিয়াকে সহজ করবে।

ভিসা স্টাম্পিং করা:

ভিসা স্টাম্পিং করা এজেন্সির কাজ। এজেন্সি আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশে অবস্থিত সৌদি এম্বাসি থেকে আপনার পাসপোর্টে ভিসা স্টাম্পিং করিয়ে নিবে। আপনার ভিসার মেয়াদ থাকবে ৯০ দিন।

নতুন ভিসার জন্য নতুন করে PDO ট্রেইনিং করা:

Pre Departure Orientation সংক্ষেপে PDO ট্রেইনিং করা বাধ্যতামূলক। জেলা কর্মসংস্থান অফিস বা ম্যানপাওয়ার অফিস এই ট্রেইনিং এর আয়োজন করে থাকে। আম প্রবাসী এপ্সের সাহায্যে বা জেলা কর্মসংস্থান অফিস বা ম্যানপাওয়ার অফিসে গিয়ে এই ট্রেইনিং এর জন্য আবেদন করা যায়। PDO ট্রেইনিং ৩ দিনের হয়। ট্রেইনিং শেষে আপনাকে একটি সার্টিফিকেট দিবে যার মাধ্যমে আপনার এজেন্সি আপনার ম্যানপাওয়ার কার্ড বের করবে। যাকে BMET কার্ডও বলা হয়ে থাকে। বৈধভাবে বিদেশ যেতে BMET কার্ড বাধ্যতামূলক। মনে রাখা বিশেষ প্রয়োজন  প্রত্যেকটি নতুন ভিসার জন্য নতুন করে PDO ট্রেইনিং করতে হয়। আপনি হয়তো সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য একবার ট্রেইনিং করেছেনব অন্য দেশে যাওয়ার জন্য আপনি এখন আবার ট্রেইনিং করতে হবে।

৫. ফ্লাইট এবং অন্যান্য প্রস্তুতি

নতুন ভিসা এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য ফ্লাইটের টিকিট এবং অন্যান্য যাত্রা-সঙ্গী বিষয় প্রস্তুত করতে হবে।

ফ্লাইট বুকিং: সৌদি আরবে ফ্লাইট টিকিট আগাম বুকিং করে রাখা ভালো।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: ভিসা, পাসপোর্ট, স্বাস্থ্য সনদ, এবং নিয়োগকর্তার কাগজপত্র সবসময় সঙ্গে রাখতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ টিপস:

১. পুরনো নিয়োগকর্তার অনুমোদন: যদি আগের নিয়োগকর্তা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকেন, তবে নতুন ভিসা পাওয়ার জন্য সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

২. রিক্রুটিং এজেন্সির সাহায্য নেওয়া: যদি প্রক্রিয়া জটিল মনে হয়, তাহলে রিক্রুটিং এজেন্সি বা এজেন্টের সাহায্য নেওয়া যায়।

৩. সৌদি সরকারের নিয়ম মেনে চলা: সৌদি আরবের ভিসা এবং অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়া মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। কোনো ভুল তথ্য বা অনিয়ম হলে আপনার ভিসা বাতিল হতে পারে।

উপসংহার

সৌদি আরব থেকে ছুটিতে আসার পর নতুন ভিসায় কাজের জন্য যেতে হলে নিয়ম মেনে এবং প্রক্রিয়াগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে।

ফাইনাল এক্সিট বা খুরুজ নেহায়ি নিয়ে সৌদি আরব থেকে নিজ দেশে যাওয়ার সময় কর্মী তার কোম্পানি বা কফিল থেকে কি কি সুবিধা পাবেন।

Leave a Comment

error: Content is protected !!