সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য কাজভেদে বেতন, ডিউটি

সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য কাজ ভেদে বেতন, ডিউটি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা কেমন হয় তা আলোচনা করা হলো।

বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য সৌদি আরব একটি অন্যতম শ্রমবাজার।  সৌদি আরবে বাংলাদেশের মানুষদের জন্য কাজের সুযোগ বেশ প্রসারিত। তেল-সমৃদ্ধ দেশটির অর্থনীতি এবং উন্নয়নশীল প্রকল্পে শ্রমিক এবং পেশাদারদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন পেশা ও কাজের ধরন অনুযায়ী এখানে বেতন এবং ডিউটি টাইম ভিন্ন হয়। অভিজ্ঞ, দক্ষ এবং আরবি ভাষা জানা শ্রমিকের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ শ্রমিকের চেয়ে বেশি হবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আরবি ভাষায় কাজে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শ্রমিককে মোয়াল্লেম বলা হয়ে থাকে। নিচে কিছু সাধারণ কাজের ধরন, তাদের বেতন এবং ডিউটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

সৌদি আরবে কাজ

১. সৌদি আরবে  কনস্ট্রাকশন ও লেবার কাজভেদে বেতন, ডিউটি

সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে কনস্ট্রাকশন বা নির্মাণ কাজের জন্য। বাংলাদেশের অনেক মানুষ নির্মাণ শ্রমিক, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, এবং মিস্ত্রির মতো কাজে নিয়োজিত।

বেতন: নির্মাণ শ্রমিকদের মাসিক বেতন সাধারণত ১৫০০  থেকে ৪০০০ রিয়াল পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীরা (যেমন প্লাম্বার বা ইলেকট্রিশিয়ান) মাসিক ১৫০০ থেকে ৪০০০ রিয়াল পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন। কিছু কোম্পানিতে শ্রমিকগন ঘন্টা ১৫-২০ রিয়াল চুক্তিতে কাজ করেন।

ডিউটি: সাধারণত দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় কাজের জন্য ওভারটাইম সুবিধা থাকে।

২.সৌদি আরবে ড্রাইভারের (গাড়ি চালক) বেতন, ডিউটি 

সৌদি আরবে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতে বাংলাদেশিদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। এটি ব্যক্তিগত ড্রাইভার, ট্রাক ড্রাইভার, বা কোম্পানি ড্রাইভার হিসেবে হতে পারে।

বেতন: ব্যক্তিগত ড্রাইভারদের বেতন সাধারণত ১২০০ থেকে ১৮০০ রিয়াল, আর ট্রাক ড্রাইভার বা বড় গাড়ির ড্রাইভাররা ২০০০ থেকে ৩০০০ রিয়াল পর্যন্ত পেয়ে থাকেন। ব্যক্তিগত ড্রাইভারদেরকে হাউজ ড্রাইভার বলা হয়। অনেক কফিল হাউজ ড্রাইভারদেরকে থাকার ব্যবস্থার পাশাপাশি খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।

ডিউটি: সাধারণত দিনে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। তবে কাজের ধরন অনুযায়ী সময় পরিবর্তনশীল হতে পারে। ওভারটাইম করলে অতিরিক্ত আয়

৩.সৌদি আরবে ক্লিনার ও মেইনটেনেন্স কাজের বেতন, ডিউটি 

ক্লিনার এবং মেইনটেনেন্স বা রক্ষণাবেক্ষণ কাজেও বাংলাদেশীদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সৌদি আরবে বলদিয়া বা সিটি কর্পোরেশনের কাজে বাংলাদেশী শ্রমিক বেশি। রাস্তা পরিষ্কার করা,  ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা শ্রমিকদের আমেল নাদ্দাফা বলা হয়ে থাকে।

বেতন: ক্লিনারদের বেতন ৮০০ থেকে ১২০০ রিয়াল পর্যন্ত হতে পারে। মেইনটেনেন্স কাজে যেমন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বা এয়ার কন্ডিশনার মেকানিকদের বেতন ১৫০০ থেকে ২০০০ রিয়াল পর্যন্ত।

ডিউটি: দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে সপ্তাহে ১ দিন ছুটি থাকে।

৪.সৌদি আরবে রেস্টুরেন্ট এবং হোটেল কর্মচারীর বেতন, ডিউটি

রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশীদের বিভিন্ন পদের কর্মী হিসেবে যেমন ওয়েটার, শেফ, হেল্পার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বেতন: ওয়েটারদের বেতন সাধারণত ১০০০ থেকে ১৫০০ রিয়াল এবং শেফ বা কুকদের বেতন ১৫০০ থেকে ২০০০ রিয়াল পর্যন্ত হতে পারে।

ডিউটি: এই কাজে সাধারণত দৈনিক ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। রেস্টুরেন্টগুলোতে ছুটির দিন সাধারণত ভিন্ন হয়।

৫.সৌদি আরবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বা ফ্যাক্টরি কাজের বেতন, ডিউটি

ফ্যাক্টরি কাজগুলো বাংলাদেশীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এই কাজগুলোতে প্যাকেজিং, প্রসেসিং এবং মেশিন অপারেটর হিসেবে বাংলাদেশিদের চাহিদা রয়েছে।

বেতন: ফ্যাক্টরি শ্রমিকদের বেতন ১০০০ থেকে ২০০০ রিয়াল পর্যন্ত হয়, কাজের ধরন এবং প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে।

ডিউটি: সাধারণত ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে ওভারটাইমের সুযোগ থাকে।

৬.সৌদি আরবে দোকান এবং সেলসম্যান কাজের বেতন, ডিউটি

বাংলাদেশীদের অনেকেই সৌদির বিভিন্ন দোকান বা মার্কেটে সেলসম্যান, ক্যাশিয়ার বা দোকানের সহকারী হিসেবে কাজ করেন।

বেতন: সাধারণত ১২০০ থেকে ১৮০০ রিয়াল পর্যন্ত হয়। কিছু ক্ষেত্রে কাজের দক্ষতা অনুযায়ী এই বেতন বাড়তে পারে।

ডিউটি: দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয় এবং দোকানের ব্যস্ততার উপর ভিত্তি করে ওভারটাইম হতে পারে।

৭.সৌদি আরবে কৃষি কাজের বেতন, ডিউটি

সৌদিতে কৃষি কাজেও কিছু সংখ্যক বাংলাদেশী কাজ করেন, যেখানে ফসল উৎপাদন, ফার্মের কাজ এবং প্রাণি পালন কাজ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

বেতন: কৃষি শ্রমিকদের বেতন সাধারণত ৮০০ থেকে ১৫০০ রিয়াল পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ডিউটি: দৈনিক ৮ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয় তবে কিছু ক্ষেত্রে সকাল ও বিকালের শিফট থাকতে পারে।

সৌদি আরবে গাড়ির কাজের বেতন, ডিউটি

বেতন: গাড়ির কাজের বেতন সাধারণত ১২০০ থেকে ৩০০০ রিয়াল পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ডিউটি: দৈনিক ৮-১২ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয় তবে কিছু ক্ষেত্রে সকাল ও বিকালের শিফট থাকতে পারে।

ওভার টাইম:

বেতনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে যেসব বিষয়:

কাজের স্থান, কোম্পানি, কাজের দক্ষতা, ভাষাগত দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং ওভারটাইম সুবিধা বেতনের ওপর প্রভাব ফেলে। অভিজ্ঞ কর্মীরা তুলনামূলক বেশি বেতন পেয়ে থাকেন। এছাড়া, কাজের স্থানের জীবনযাত্রার ব্যয় এবং অন্যান্য সুবিধাও বিবেচ্য বিষয়।

সৌদি আরবে কফি শপের বেতন ডিউটি :

সৌদি আরবে নতুন প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিকট কফি শপের চাকরি করা অন্যতম আকর্ষণীয় একটি কাজ। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে কাজ, ডিউটি ৮-১০ ঘন্টা বেতন ১৫০০, সপ্তাহে ১ দিন ছুটি, উপরি ইনকামের ব্যবস্থা যেমন টিপস বা হাদিয়া পাওয়া যায় এসব কারনে নতুনদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি কাজ। বাংলাদেশ থেকে দালালগন নতুনদের কফি শপে চাকরি দিবে এই কথা বলে সৌদি আরবে নিয়ে যায়। বাস্তবে এত কফি শপের চাকরি সৌদি আরবে নাই।

সৌদি আরবে হোটেলে চাকরি: বেতন, ডিউটি

 সৌদি আরবে হোটেলে চাকরি বলতে বুঝায় ত্রি স্টার, ফাইভ স্টার হোটেলে চাকরি। আরবিতে হোটেলকে ফুন্দুক বলে। প্রবাসী বাংলাদেশীরা সাধারণত হোটেলে হাউজ কিপিং এর চাকরি করে, যাদের লেখাপড়া বেশি তারা উচ্চপদের চাকরি করে থাকে। তবে বাংলাদেশীরা উচ্চ পদে চাকুরি করে এটা সং্খায় একেবারে কম। হাউজ কিপিং এর বেতন ১২০০ থেকে শুরু,  ডিউটি ৮-১০ ঘন্টা, ছুটি সপ্তাহে ১ দিন, টিপস পাওয়া যায়। হাউজ কিপিং এর চাকরি বলতে ক্লিন করা, গেস্টদের রুমে বিভিন্ন জিনিস পৌঁছে দেওয়া।

সৌদি আরবে কোন কাজের চাহিদা বেশি?

সৌদি আরবে ক্লিনার, রাজমিস্ত্রী, ইলেক্ট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, টাইলস মিস্ত্রী এসব কাজের চাহিদা বেশি। ২০৩৪ সালে সৌদি আরব ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে। সৌদি সরকার নানা মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। ফলে কন্সট্রাকশান কাজের চাহিদা সবসময় থাকবে।

শেষ কথা

সৌদি আরবে বাংলাদেশীদের কাজের সুযোগ রয়েছে নানা ধরনের। দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে চাহিদাও বাড়ছে।

সৌদি আরব থেকে নিজ দেশে ছুটিতে যাওয়ার সময় একজন কর্মী কোম্পানি থেকে কি কি সুবিধা পাবেন।

Leave a Comment

error: Content is protected !!